স্মারকলিপি হলো কোম্পানির মূল দলিল, সনদ বা সংবিধান। এতে কোম্পানির মূল বিষয়াবলি; যেমন-নাম, ঠিকানা, উদ্দেশ্য, মূলধন, দায় ও সম্মতির বিষয় লিপিবদ্ধ থাকে। এটা কোম্পানির কার্যক্ষেত্র ও ক্ষমতার সীমা নির্দেশ করে । এতে অন্তর্ভূক্ত নেই এমন কোনো কাজ কোম্পানী সম্পাদন করতে পারে না।
কোম্পানি আইনের ৬ ধারায় শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানির ৭ ধারায় প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানির এবং ৮ ধারায় অসীম দায় কোম্পানির স্মারকলিপির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলা হয়েছে।
নিম্নে স্মারকলিপির ধারাসমূহ উল্লেখ করা হলো-
১. নাম ধারা (Name Clause) : কোম্পানির নাম এবং নামের শেষে পাবলিক কোম্পানির ক্ষেত্রে ‘লিমিটেড’ এবং প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে ‘প্রাইভেট লিমিটেড' -এ শব্দগুলো যোগ করতে হবে। কোম্পানির যেকোনো নাম রাখা যেতে পারে ।
তবে নাম গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্র আইনের ১১ ধারায় বর্ণিত নিম্নেক্ত বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়—
i) একটি বিদ্যমান কোম্পানি ইতোপূর্বে যে নামে নিবন্ধিত হয়ে উক্ত নামেই বহাল আছে অথবা যে নামের সাথে প্রস্তাবিত নামের এমন সাদৃশ্য থাকে যে, উক্ত সাদৃশ্যের ফলে প্রতারণা করা সম্ভব।
ii) সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের দ্বারা অনভিপ্রেত বলে ঘোষণা করেছে; এমন কোনো নাম সরকারের লিখিত পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে গ্রহণ করা যাবে না ।
iii) জাতিসংঘ বা জাতিসংঘ কর্তৃক গঠিত এর কোনো সহায়ক সংস্থা অথবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নাম বা ঐসব নামের শব্দ সংক্ষেপ সংবলিত কোনো নাম, জাতিসংঘ বা এর সহায়ক সংস্থার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্ষেত্রে এর ডাইরেক্টর জেনারেলের লিখিত পূর্ব অনুমতি ব্যতীত
ব্যবহার করা যাবে না।
২. অবস্থান ও ঠিকানা ধারা (Situation and Address Clause): কোম্পানির নিবন্ধিত কার্যালয় যে অঞ্চলে অবস্থিত থাকবে সে স্থানের নাম। এর সাথে কোম্পানি কোন কোন এলাকায় এর কার্যাবলি বিস্তৃত করবে তাও বর্ণিত থাকবে ।
৩. উদ্দেশ্য ধারা (Objective Clause): কোম্পানি কি ধরনের ব্যবসায়ে লিপ্ত থাকবে তা এ ধারায় বিস্তৃতভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে। এ উদ্দেশ্যের বাইরে কোনো ব্যবসায় করা যায় না। এ ধারা একদিকে কোম্পানির ক্ষমতাকে সংজ্ঞায়িত করে এবং অন্যদিকে কোম্পানি প্রদত্ত ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে। উক্ত ধারায় কোম্পানির সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহের বর্ণনা থাকে এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে কী কী ব্যবসায় করতে পারবে তাও বিশদভাবে বর্ণিত থাকে ।
৪. দায় ধারা (Liability Clause): কোম্পানির সদস্যদের দায় তাদের ক্রয়কৃত শেয়ারের আংকিক মূল্য (Face value) দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। শেয়ারের অপরিশোধিত মূল্যের জন্য কেবল শেয়ারহোল্ডারদেরকে দায়ী করা যাবে এবং শেয়ারের মূল্য সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করলে তারা সম্পূর্ণ দায়মুক্ত হবেন।
৫. মূলধন ধারা (Capital Clause): প্রস্তাবিত মোট মূলধনের পরিমাণ এবং মূলধন কতকগুলো এবং কী প্রকারের শেয়ারে বিভক্ত থাকবে তা এ ধারায় উল্লেখ থাকে। কোম্পানির এ মূলধনকে নিবন্ধিত বা অনুমোদিত মূলধন বলা হয়। এর অতিরিক্ত মূলধন কোম্পানি সংগ্রহ করতে পারে না ।
৬. সম্মতি ধারা (Consent Clause): স্মারকলিপির শেষ অংশে প্রত্যেক সদস্য তাঁর নামের বিপরীতে কতগুলো শেয়ার ক্রয় করবেন তার সম্মতি ধারা সম্পর্কে নিরূপ বিধান বর্ণিত হয়েছে—
i. সংঘ-স্মারকে স্বাক্ষর প্রদানকারী প্রত্যেক সদস্যকে কমপক্ষে একটি শেয়ার ক্রয় করতে হবে । [ ধারা ৬ (খ)]
ii. প্রত্যেক স্বাক্ষরকারী সদস্যকে তার নামের বিপরীতে ক্রয়কৃত শেয়ারের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে । [ধারা ৬ (গ)]
iii. প্রত্যেক স্বাক্ষরকারী সদস্য অন্ততঃপক্ষে দু'জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর প্রদান করবেন এবং উক্ত স্বাক্ষর সাক্ষী কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে। [ধারা ৯(গ)
পরিশেষে বলা যায়, উপযুক্ত ধারাসমূহ বর্ণিত সকল ধরনের কোম্পানিকে সর্বদা অনুসরণ করতে হয়। এর কোনো একটি শর্ত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনুমোদন ও বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ক্ষেত্র বিশেষে আদালত ও সরকারের অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়।
আরও দেখুন...